
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ন্যায্য দাবি: তিনটি গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারের প্রয়োজন
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষার অন্যতম প্রধান প্রতিষ্ঠান, যেখানে লক্ষাধিক শিক্ষার্থী স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে পড়াশোনা করেন। কিন্তু শিক্ষার্থীদের জন্য বেশ কিছু কঠিন নিয়ম ও সীমাবদ্ধতা রয়েছে, যা অনেকের শিক্ষাজীবন বাধাগ্রস্ত করছে। শিক্ষার্থীদের দীর্ঘদিনের দাবি, প্রিলিমিনারি টু মাস্টার্স (Preliminary to Masters) প্রোগ্রামের কিছু নিয়ম সংস্কার করা হোক।
বর্তমানে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ দাবি উত্থাপিত হয়েছে, যা শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ:
১. প্রিলিমিনারি টু মাস্টার্স কোর্সে ফেল করলেও মাস্টার্সে ভর্তি হওয়ার সুযোগ দিতে হবে
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে নিয়ম রয়েছে যে, যদি কেউ প্রিলিমিনারি টু মাস্টার্সে (Preli to Masters) কোনো বিষয়ে ফেল করে, তবে সে মূল মাস্টার্স প্রোগ্রামে (Masters Final) ভর্তি হতে পারে না। কিন্তু এটি অত্যন্ত কঠোর এবং অনেক শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ নষ্ট করে দিচ্ছে।
বিভিন্ন পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা স্নাতক (Honors) কোর্সে ব্যাকলগ থাকলেও মাস্টার্সে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পায়। কিন্তু জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের এই সুযোগ নেই, যা তাদের ক্যারিয়ারের জন্য বড় বাধা সৃষ্টি করছে।
শিক্ষার্থীদের দাবি—যারা এক বা একাধিক বিষয়ে ফেল করেছে, তাদের জন্যও মাস্টার্সে ভর্তি হওয়ার সুযোগ দেওয়া হোক। পরবর্তীতে তারা ব্যাকলগ পরীক্ষা দিয়ে পাস করতে পারবে।
২. প্রিলিমিনারি টু মাস্টার্স এবং মাস্টার্স দুই কোর্সেই খাতা পুনঃমূল্যায়নের সুযোগ দিতে হবে
অনেক সময় পরীক্ষার ফলাফলে ভুল হতে পারে, নম্বর কম আসতে পারে, অথবা শিক্ষার্থী তার প্রত্যাশার চেয়ে অনেক কম নম্বর পেতে পারে। অথচ দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে পুনর্মূল্যায়ন বা রিভিউর ব্যবস্থা রয়েছে।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদেরও প্রিলিমিনারি টু মাস্টার্স ও মাস্টার্স পরীক্ষার খাতা পুনঃমূল্যায়নের সুযোগ দেওয়া উচিত। এটি শিক্ষার্থীদের প্রতি সুবিচার নিশ্চিত করবে এবং ভুল মূল্যায়নের কারণে কেউ যাতে অন্যায়ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, তা নিশ্চিত করা যাবে।
৩. প্রিলিমিনারি টু মাস্টার্স কোর্স পাস করলে বিসিএস পরীক্ষার সুযোগ দিতে হবে
বিসিএস (বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস) পরীক্ষার জন্য অনার্স বা মাস্টার্স ডিগ্রি থাকা বাধ্যতামূলক। কিন্তু Preli to Masters কোর্স করা শিক্ষার্থীরা বর্তমানে এই সুযোগ থেকে বঞ্চিত।
অনেক শিক্ষার্থীই তিন বছরের স্নাতক (Pass Course) শেষ করে Preli to Masters করে থাকে। কিন্তু বর্তমান নিয়ম অনুযায়ী, Preli to Masters সম্পন্ন করলেও বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ নেই। এটি একেবারেই অন্যায্য, কারণ এই শিক্ষার্থীরাও মাস্টার্স সম্পন্ন করেছে।
শিক্ষার্থীদের দাবি—Preli to Masters পাস করা শিক্ষার্থীদেরও বিসিএস পরীক্ষার সুযোগ দেওয়া হোক।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়কে সংস্কারের সময় এসেছে
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থার একটি বিশাল অংশ। কিন্তু তাদের জন্য কিছু কঠোর নিয়মের ফলে তারা বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ছে।
কেন এই সংস্কার জরুরি?
- শিক্ষার্থীরা প্রচুর সময় ও শ্রম ব্যয় করে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করে, কিন্তু একটি ফেলের কারণে তাদের মাস্টার্স করার সুযোগ না থাকা অনুচিত।
- খাতা পুনঃমূল্যায়নের সুযোগ না থাকায় অনেক শিক্ষার্থী ভুল ফলাফলের কারণে হতাশার মধ্যে পড়ে যায়।
- বিসিএস-এর মতো প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার সুযোগ না থাকায় Preli to Masters শিক্ষার্থীরা চাকরির বাজারে পিছিয়ে পড়ছে।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ক্যারিয়ারের স্বার্থে, এই তিনটি নিয়ম সংস্কার করা এখন সময়ের দাবি।
আপনারাও আওয়াজ তুলুন!
শিক্ষার্থীদের এই ন্যায্য দাবি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য আপনিও আওয়াজ তুলুন।
- জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিযোগ বাক্সে আবেদন জমা দিন।
- সোশ্যাল মিডিয়ায় এই বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করুন।
- সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সবার সঙ্গে বিষয়টি শেয়ার করুন।
শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ রক্ষা করতে হলে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিনির্ধারকদের অবশ্যই এই দাবি পূরণ করতে হবে!
Post a Comment